লাউ চাষের উপযুক্ত সময় - বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকে সঠিক তথ্য গুলো
প্রিয় পাঠক, আমাদের দেশের অন্যতম সুস্বাদু ও ভিটামিন যুক্ত সবজি হলো লাউ। আপনি যদি লাউ চাষের উপযুক্ত সময় ও বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে চান। তাহলে আর্টিকেলটি শেষপর্যন্ত পড়তে থাকুন।
লাউ এমন একটি সবজি এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা লাউয়ে ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সহ ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও লাউয়ের পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক।
লাউ গাছের পরিচর্যা
লাউ চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানার আগে আপনার যে জিনিসটি জানা অত্যন্ত জরুরি সেটি হল লাউ গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে লাউ গাছের পরিচর্যা করলে ভালো ফলন আশা করা যায়।
লাউ গাছের পরিচর্যার জন্য সর্বপ্রথম যে জিনিসটি মাথায় রাখতে হবে তা হলো পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। কারণ লাউ গাছে অনেক পরিমাণের পানির প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন সকাল ও বিকালে লাউ গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে।
তবে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। লাউ গাছের প্রয়োজনীয় পানির চেয়ে যদি বেশি পানি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে গাছের ফলন ব্যাহত হতে পারে। এবং লাউ গাছের ফল ছোট অবস্থাতেই ঝরে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন ২-৩ মগ পানি গাছের গোড়ায় দিতে পারেন।
প্রতিমাসে অন্তত এক থেকে দুইবার লাউ গাছের পাতা তুলে নিতে হবে। যাতে করে লাউ গাছের উপরে সূর্যের আলো ও বাতাস সঠিকভাবে পড়তে পারে। এতে করে লাউ গাছের ফলন বৃদ্ধি হবে। তাই মাসে বেশ কয়েকবার লাউ গাছের পাতা তুলে নেওয়া উচিত।
লাউ গাছের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে লাউ গাছের গোড়ায় জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। লাউ গাছের গোড়ার থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি দূরে জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
লাউ গাছের গোড়ার ছোট ছোট ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। এগুলো লাউ গাছের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এবং গাছের খাদ্য উপাদান রস শোষণ করে নেয় যার ফলে ফলন অনেকটাই কমে যায়। তাই গাছের গোড়ার ছোট ছোট ডাল পাতা কেটে নেওয়া উচিত।
লাউ চাষের উপযুক্ত সময়
কৃষিবিদদের মতে, লাউ চাষের উপযুক্ত সময় হল মধ্য শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়। এই সময়টায় বিজ বপন করতে হয়।
- জাত ভেদে মধ্য ফাল্গুন থেকে জৈষ্ঠ মাস বীজ বোপনের উত্তম সময় হিসাবে ধরা যায়।প্রতি শতকে বীজ বপনের পরিমাণ ৪-৫ গ্রাম হতে হবে এর বেশি হওয়া যাবে না।
- আপনি যদি পলিথিনে ব্যাগে লাউ চারা রোপন করেন। তাহলে যারা দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকবে।
- পলিথিন ব্যাগে সমপরিমাণে মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ করে ভর্তি করতে হবে।এবং ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ফুটা করে দিতে হবে।
- এরপর বীজ তোলার জন্য উর্বর মাটি নির্বাচন করতে হবে।যাতে করে সহজে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে।
- প্রতিটি মাদায় ২-৩টি বিজ মাটির ১-২ ইঞ্চি গভীরে পুতে দিতে হবে। যাতে করে চারা ভালভাবে বৃদ্ধি হতে পারে।
- লাউ চাষের উপযুক্ত সময় শীতকাল। ফলে লাউ চাষাবাদের জন্য মাঘ ও ফাল্গুনে বীজ বপন করতে হবে। যাতে করে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি হতে পারে।
- এছাড়াও বছরের যে কোন সময় লাউ এর চাষাবাদ করা সম্ভব। তবে অতিরিক্ত বর্ষায় লাউয়ের ফলন অনেক কমে যায়।
বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি
উপরিক্ত আলোচনায় লাউ চাষের উপযুক্ত সময় সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনেছেন, এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য।
জমি নির্বাচন করতে হবে: বারোমাসি লাউ চাষের জন্য প্রথমেয় যে দিকটা আপনাকে সবসময় খেয়াল রাখা উচিত সেটি হল সঠিক জমি নির্বাচন। বারোমাসি লাউ চাষের উপযুক্ত জমি হিসেবে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিকে নির্বাচন করতে হবে। তারপর মাটিতে ভালোভাবে চাষ করে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপণের সময়কাল: বারোমাসি লাউ চাষের ক্ষেত্রে সাধারণত ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাস উপযুক্ত সময়। জমিতে বীজ বপনের আগে বীজগুলিকে অন্তত একটা দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবং মাটির গোড়া থেকে ২-৩ সেন্টিমিটার দূরত্বে পুতে দিতে হবে। কৃষিবিদদের মতে, বারোমাসি লাউ চাষের উপযুক্ত সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসকে ধরে নেওয়া যায়।
চারা রোপনের সঠিক নিয়ম: জমিতে বীজ বপন হয়ে গেলে আপনাকে সঠিক নিয়মে চারা রোপন করতে হবে। সাধারণত বীজ গজানোর ১০-১৫ দিন পরে জমিতে চারা রোপন করতে হয়। চারা রোপনের সময় অবশ্যই জমিতে মাদা তৈরি করতে হবে। এরপর মাটির সাথে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর, বা জৈব সার, ১০০ গ্রামের মত টিএসপি, ৫০ গ্রামের মতো এমপি ও ২০ গ্রামের মত জিপসাম সার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। এতে করে জমির উর্বলতা বৃদ্ধি হতে থাকে। চারা রোপনের পরপরই জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
সার প্রয়োগ করার নিয়ম: জমিতে অবশ্যই সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করলে জমির উর্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই চারারোপনের পরে প্রতি মাসে অন্তত ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও ৫০ গ্রাম এমপি সার সহ জৈব সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। আর গাছে ফুল আসার সময় প্রত্যেকটি গাছে ৪০-৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরী।
জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করা: বারোমাসি লাউ চাষের ক্ষেত্রে নিয়মিত পানি সেচ করা অত্যন্ত জরুরি। আর শুক্ল মৌসুমে তো প্রতিদিনই পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পানি সেচ করতে গিয়ে জমিতে যেন জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।
লাউ গাছের আগাছা পরিষ্কার করা: আপনি যদি বারোমাসি লাউ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই লাউ গাছের যত্ন নিতে হবে। এজন্য আপনাকে লাউ গাছের গোড়ায় যে আগাছা গুলো জন্মায় সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ আগাছা লাউ গাছের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
ফল সংগ্রহ করার সময়কাল: এবার যদি আপনার জমিতে লাউ গাছ বৃদ্ধি হতে থাকে। তাহলে লাউ গাছের ফুল আসবে। আর এই ফুল ফোটার ৩০-৩৫ দিন পরে আপনাকে ফল সংগ্রহ করে নিতে হবে। অবশ্যই ফল কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করবেন এতে করে গাছের কোন ক্ষতি হবে না।
পোকামাকড় দমন করার নিয়ম: সাধারণত লাউ গাছে পোকামাকড় এর আক্রমণের ফলে গাছে আশানুরূপ ফল আসে না। লাউ গাছের ফল ছিন্নকারী পোকা লাউ গাছ নষ্ট করতে যথেষ্ট। এছাড়াও মাজরা পোকা, মিলিবাগ পোকা, থ্রিপস পোকা লাউ গাছের ফল তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এ সকল পোকা দমনের জন্য জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার। তবে কীটনাশক ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
তবে আপনি যদি বাউনি দেয়া লাউ চাষের ফলন করতে পারেন তাহলে লাভবান হবেন বেশি। কারণ এ জাতের লাউ এর ফলন অনেক বেশি হয়ে থাকে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, উপরিক্ত আলোচনায় লাউ চাষের উপযুক্ত সময়। বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সহ লাউ গাছ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। কারণ লাউ গাছের পরিচর্যা, লাউ চাষের উপযুক্ত সময়, বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সহ আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যদি এগুলো মেনে লাউ চাষ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি লাভবান হবেন ইনশাল্লাহ।আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন। এবং এরকম সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url