কাঁচা কলায় কি কি ভিটামিন আছে - কাঁচা কলার পুষ্টি উপাদান জেনে নিন
কলা নামটি আমাদের কাছে খুব সুপরিচিত এবং অনেক সহজ মূল্যের একটি ফল। কলা যেমন অনেক সুস্বাদু এবং এতে অনেক পুষ্টি ও ভিটামিন রয়েছে। তবে কাঁচা কলার আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর সেটি হল কলা ফল হিসেবে যেমন কদর রয়েছে। তেমনি সবজি হিসাবেও কলার গুনাগুন অনেক।
সাধারণত পাকা কলা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। আর কাঁচা কলা সবার কাছে সবজি হিসেবে পরিচিত। কাঁচা করায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
পেট ভালো রাখতে কাঁচা কলার গুনাগুন রয়েছে অনেক। পেটের সমস্যা হলেই কাঁচা কলা খাওয়ার জন্য বলা হয়। শুধু যে পেটের সমস্যা সমাধানে কাঁচা কলা খেতে হবে এমনটাও কিন্তু নয়। তবে কাচা কলা শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে।
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা কলার খোসা যদি ছোট ছোট করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পর দিন সকালে ওই পানি পান করা যায় তাইলে শরীরের আমশয় রোগ নির্মূল করা সম্ভব। এভাবে একটানা 30 দিন খেতে হবে। এছাড়াও পেটের বিভিন্ন অসুখের জন্য কাঁচা কলা পরিমাণ মতো সিদ্ধ করে টাটকা দই এর সাথে মাখিয়ে খাইতে হবে। আর যদি কাঁচা কলা কে শুকিয়ে গুড়া করে প্রতিদিন স্বল্প পরিমাণ মতো দুধের সাথে মিশিয়ে খাইতে পারলে প্রসাব ও যৌন ব্যাধি অসুখ নির্মূল সম্ভব।
কাঁচা কলার পুষ্টি উপাদান
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা কলা খেতে হবে। কারণ কাঁচা কলায় রয়েছে আর জাতীয় উপাদান। যা শরীরের চর্বি কমাতে অনেক সাহায্য করে।
কাঁচা কলা অনেক ভারী খাবার। ফলে খাদ্য চাহিদা অনেকটা কমে যায়। ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি চাহিদা কমে।
- কাঁচা কলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কাঁচা কলা ডাইবেটিক্স রোগের প্রতিরোধ করে।
- কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় কাঁচা কলা।
- কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ,ও ভিটামিন যা হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলায় কি কি ভিটামিন আছে
কাঁচা কলায় অধিক পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে। কাঁচা কলা অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধের সহায়ক। এতে রয়েছে ভিটামিন- বি ৬, ভিটামিন এ, ও ভিটামিন সি,। ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম আর ফসফেট। কাঁচা কলা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। কাঁচা কলায় এন্টি- অক্সিডেন্ট এ ভরপুর।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একটি কাঁচা কলায় আছে ৭.৫ গ্রাম প্রোটিন, ২০ গ্রাম শর্করা, ০.৭ গ্রাম চর্বি।এছাড়াও প্রতিটি কাঁচা কলায় রয়েছে ১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮০ মিলিগ্রাম লোহ, এবং ১১৫ কিলো ক্যালোরি খাদ্য শক্তি।
এছাড়াও কাঁচা কলা মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলায় সোডিয়াম এর পরিমাণ অনেক কম এবং পটাশিয়াম এর পরিমাণ অধিক হওয়ায় এটি হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভাবনা কমায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখলে শরীরে ৪৫ শতাংশ হার্ট স্টোকের ঝুকি কমিয়ে দেয়।এছাড়াও মানব দেহের পাকস্থলের দেওয়াল কেএসিরের হাত থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা
সাধারণত আমরা কলার খোসা ময়লা ও আবর্জনা হিসেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে কলার খোসার অনেক গুণাগুণ রয়েছে। আপনার শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। কলা দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। এর পাশাপাশি কলা খোসাতেও রয়েছে অনেক অনেক উপকার। আপনি কলার খোসা খেয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আসেন জেনে নেওয়া যাক কলার খোসার অভিনব কিছু ব্যবহার।
মুখের দাগ ও ব্রণ দূর করতে
মুখের দাগ ও বন্ধুর করতে কলার খোসা অনেক উপকারে। কলার ঘোষ এর মাধ্যমে একবার যদি ব্রণ ভালো হয়ে যায় তাইলে আর ফিরে আসে না। যদি গোটা মুখে ভালোভাবে ঘষে সারারাত রেখে দেওয়া হয় তাইলে ব্রণের সমস্যা কেটে যাবে। পাশাপাশি যদি কলার খোসা পরিমাণ মতো মধুর সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ঘষলে মুখের কালো দাগ দূর হয়। কলার ঘোষায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বি সি পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন ওে জিংক আছে। যা পুরোনো ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
চকচকে সাদা দাঁতের জন্য
সাদা ঝকঝকে দাঁত করতে কলার খোসার ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের অনেকের দাঁত থেকে ময়লা ও হরদে ভাব কিছুতেই উঠতে চায় না। এজন্য কলার খোসার ভেতরের অংশ দিয়ে দাঁতকে ভালোভাবে ঘষতে হবে। এছাড়াও দাঁত ব্যথা কমাতে অনেক ভালো কাজ করে ।
দাদের ওষধ হিসাবে
দাদের ওষধ হিসাবে কলার খোসা অনেক ভালো কাজ করে। চুলকানো স্থানে গলার ঘষে ঘষে দিলে চুলকানি খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায় এবং দ্রুত দাদ ভাল হয়ে যাবে।
জুতা পরিষ্কার করতে
জুতা চকচকে পরিষ্কার করতে কলার খোসার ব্যবহার করা যায়। কলার খোসার ভেতরের অংশ জুতার উপরে ভালোভাবে বুঝতে থাকুন। এরপর একটি নরম কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলুন। দেখবেন জুতা ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আসলে কলার খোসায় প্রাকৃতিক অয়েল রয়েছে যা জুতার লেদারকে চকচকে করতে অনেক সাহায্য করে।
খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা থাকা প্রয়োজন কেন
কাঁচা কলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। এটি পাকা কলার থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা। কাঁচা কলার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে সুসা প্রারাডিসিকা। পাকা কলার চেয়ে কাঁচা কলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। কাঁচা কলায় রয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ফ্যাট, লোহা প্রোটিন ও বিভিন্ন ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদি।
ফল হিসেবে কলা কে পছন্দ হলেও ,কাচা কলাকে সবজি হিসাবে অনেক মানুষই পছন্দ করেন না। কিন্তু সবজি হিসাবে কাঁচা কলায় অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। দেহের ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কাঁচা কলা কে রাখুন। এবং চর্বি কমাতে কাঁচা কলার অনেক গুণ রয়েছে। কাঁচা কলা আস যুক্ত হওয়ায় তার চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনার-আমার সকলেরই উচিত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা কে রাখা।
লেখকের মন্তব্য পড়ুন
আজকের আলোচনা থেকে আপনারা কাঁচা কলা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন যে, কাঁচা কলা আমাদের শরীরের জন্য কত উপকৃত একটি জিনিস। এবং কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। ফল বিষয়ে এরকম আরো তথ্যমূলক সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পাইতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url