মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা - আলুর রস মুখে মাখলে কি হয় যা সবার জানা উচিত !
প্রিয় পাঠক, আলু আমাদের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। আলু শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় না রান্না ছাড়াও আলুর রয়েছে অনেক উপকারিতা। মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা রয়েছে বহুগুণ। আলু রান্না ছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নেও অনেক উপকারী। আপনি জানেন কি আলুর রস মুখে মাখলে কি হয়? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আলুর রস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে, আলুর রস ত্বক ও চুলের যত্নে অনেক উপকারী একটি জিনিস। এমনকি বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা থেকে আরোগ্য পেতে আলুর রস খাওয়া যাইতে পারে। আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান ও ক্যালসিয়াম।
আলুর রসের ফেসপ্যাক
মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা সর্ম্পকে জানার আগে আপনাকে যে বিষয় সর্ম্পকে জানতে হবে তা হলো আলুর রসের ফেসপ্যাক কি ভাবে তৈরি করতে হয়। তাহলে দেরি কেন? চলুন যেনে নেওয়া যাক কি ভাবে আলুর রসের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার করতে হয়।
আলু ও লেবু দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি: প্রথমে আলুকে ভালোভাবে পিষে এর রস সংগ্রহ করতে হবে। তারপর এক চা চামচ আলুর রসের সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশ্রণ করতে হবে।এরপর এ মিশ্রণটি ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে। তবে এ মিশ্রণের সাথে হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিলে প্যাকটি আরও কার্যকর হবে।
আলু ও ডিমের ফেসপ্যাক তৈরি: ডিমে এক ধরনের বিশেষ উপাদান রয়েছে চা ত্বক ঝকঝকে করতে সাহায্য করে থাকে। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আলুর রসের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে। এর সাথে ভিটামিন ই যুক্ত ক্যাপসুল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলু ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক: আলু ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক আপনার ত্বকের ব্রণ এবং ত্বকের অনেক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই প্র্যাকটি তৈরি করার জন্য একটি পরিষ্কার বাটিতে আলু গ্রেট করে নিন এবং এর সাথে এক চা চামচ গোলাপ জলের পানি ভালোভাবে মিশ্রণ করে নেন।
আলু ও চন্দনের ফেসপ্যাক তৈরি: আলু ও চন্দনের তৈরি ফেসপ্যাক মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। চন্দনের গুড়ার সাথে আলুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যে চন্দনের সাথে আলুর রস ভালোভাবে মিশ্রিত হয়েছে কিনা।
ফেসপ্যাক ব্যবহারের নিয়ম: উপরোক্ত প্রতিটি ফেসপ্যাক ব্যবহারের জন্য আপনার মুখ পরিষ্কার পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ফেসপ্যাক গুলো মুখের ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এবং এক মিনিটের মতো মুখ ম্যাসাজ করতে হবে। মুখ ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে ফেসপ্যাকটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দ্বারা মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
(উপরোক্ত পরামর্শগুলি সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হল। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন)
মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা
মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা রয়েছে অনেক। আলুর রস মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে ব্যপক ভুমিকা রেখে থাকে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা গুলো কি কি?
- সর্বপ্রথম মুখের ব্রণ দূর করতে আলুর রসের উপকারিতা রয়েছে অনেক। মুখের যে স্থানে ব্রণ রয়েছে ঐ স্থানে আলুর রস লাগিয়ে রাখলে ব্রণ এর সমস্যা নিরাময় সম্ভব।
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আলুর রস অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে। আলুর রস মুখে লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে হতে থাকে।
- মুখের মধ্যে কাটা দাগ থাকলে তা আলুর রসের মাধ্যমে মুছে ফেলা সম্ভব। আলুর রসের মধ্যে এমন এক উপাদান রয়েছে যা মুখের কাঁটা দাগ দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
- মুখের মরা চামড়া দূর করে ঝকঝকে করে গড়ে তুলে আলুর রস। আলুর রস মুখের স্কিনের মরা চামড়া দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
- আমাদের যাদের অতিরিক্ত মুখ ঘামে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত মুখে আলুর রস ব্যবহার করা দরকার। কারণ আলুর রস অতিরিক্ত মুখ ঘামা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
- মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা যেমন রয়েছে। তেমনি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম যা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে।
আলুর রস মুখে মাখলে কি হয়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আলুর রসের উপকারিতা রয়েছে অনেক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, আয়রন ও পটাশিয়াম যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে থাকে। তাই আলুর রস মুখে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সম্ভব।
আমরা বিভিন্ন মানসিক চাপ ও পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের মুখে বলরেখা পড়তে দেখা যায়।তার সাথে সাথে ত্বকের সৌন্দর্য কমে যায়। এক্ষেত্রে আলুর রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আলুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট মুখের বলরেখা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
নিয়মিত আলুর রস মুখে মাখলে ত্বকের র্ডাক স্পট অনেক কমে যায়। এর সাথে সাথে ত্বকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা দূষিত উপাদান সমূহ আলুর রস বের করে দেয়। যার ফলে মুখের ব্রণের প্রবণতা অনেক কমে যায়। এমনকি আলুর রস ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে।
আমরা সারাদিন তীব্র রোদে ঘুরাঘুরি করার কারণে আমাদের ত্বকের অনেক অংশ পুড়ে যায়। আর এ পুরা ত্বককে কে স্বাভাবিক করতে আলুর রসের কোন বিকল্প নাই। তাই মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা অনেক। তাই নিয়মিত আলুর রস মুখে ব্যবহার করা উত্তম।
আপনি যদি নিয়মিত আলুর রস দ্বারা ত্বকের পরিচর্যা করতে থাকেন তাহলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ও স্কিনের টোন এর দারুন উন্নতি হতে থাকবে। আলুতে থাকা মিনারেল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
আপনাদের যাদের ড্রাই স্কিনের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে আলুর রসের ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনার শুকনো ত্বকে লোশন বা অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে শুকনোতা কমাতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত আলুর রস ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের শুকনোতা কমানো সম্ভব।
সাধারণত আমরা অতিরিক্ত টেনশন ও স্বাভাবিক ঘুম হবার না কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। আর এই কালো দাগ দূর করতে আলুর রসের ভূমিকা অনেক। সামান্য পরিমাণের আলুর রস তুলাই ভিজিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখতে পারে। এতে করে চোখের নিচের কালো দাগ দূর সম্ভব।
আলুর রস চুলে দিলে কি হয়
মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন আলুর রস চুলের জন্যও অনেক উপকারি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আলুর রস চুলে দিলে কি হয়।
সাধারণত আমরা চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রসাধনে ও কেমিক্যালযুক্ত উপাদান ব্যবহার করে থাকে। যা আমাদের চুলের উপকার করার চেয়ে ক্ষতি করে থাকে বেশি। এক্ষেত্রে আলুর রস চুলের যত্নে প্রাকৃতিকভাবে উপকার করে থাকে।
আলুতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত উপাদান। যা চুলের স্ক্যাল্প ভালো রাখতে সাহায্য করে। এমনকি চুলের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে আলুর রসের গুনাগুন রয়েছে। তবে সঠিক উপায় আলুর রস চুলে ব্যবহার করলে আপনি উপকৃত হবেন নিশ্চিত।
আপনার চুলের ঘনত্ব ও চুলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আলুর রস আপনাকে সাহায্য করে থাকবে। এর জন্য আপনাকে প্রথমে এক কাপ পরিমাণে আলুর রস এর সাথে ডিমের হলুদ কুসুম মিশে নিতে হবে এবং তার সাথে দুই চা চামচ মধু নিতে হবে।
এরপর আলুর রসের সাথে ডিমের কুসুম ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশেয়ে নেওয়ার পর চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। চুলে এই পেস্ট লাগানো হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
অবশ্যই চুল শ্যাম্পু দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একবার যদি এই উপায়ে আলুর রস চুলে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার চুল এর ঘনত্ব বাড়বে তো বটে তার সাথে সাথে আপনার চুল হয়ে উঠবে কোমল ও সুন্দর।
আলু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
ফর্সা এবং উজ্জ্বল ত্বক অর্জন করা আমাদের সবারই জন্য একটি সাধনার বিষয়। আমরা অনেকেই ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। এ প্রসাধনী গুলো ত্বকের বিভিন্ন রকমের ক্ষতি করতে সাহায্য করে।
কিন্তু আমাদের অনেকেরই অজানা যে প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে আলুর ভূমিকা রয়েছে অনেক। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে আলু কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
আপনি যদি আপনার মুখের ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে চান। তাহলে আপনাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জানতে হবে তা হল মুখে আলুর সঠিক ব্যবহার। তাই প্রথমে আলুর রসের সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে মুখে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে করে মুখের কালো দাগ দূর হবে।
আমাদের অনেকের ত্বকে তেলাক্ত ভাব দেখা দেয়। আর এই তেলাক্ত ভাব দূর করতে আলুর রসের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এবং এর সাথে এক টেবিল চামচ লেবু মিশিয়ে নিয়ে তেলাক্ত ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এবং 10 মিনিট পর মুখ ধুয়ে নেন। দেখবেন আপনার তেলাক্ত ভাব কমে গেছে।
আলু আমাদের ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ গুলোকে সুস্থতা ফিরে পেতে সাহায্য করে থাকে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ত্বকে আলুর ব্যবহার করা উচিত। এতে করে আমাদের ত্বক হবে ফর্সা ও উজ্জ্বল।
শেষ কথা
তাই পরিশেষে বলাই যায় যে, আলু যেমন আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। তেমনি ত্বকের যত্নেও আলুর কার্যকারিতা অনেক। উপরিক্ত আলোচনায় মুখের জন্য আলুর রসের উপকারিতা, আলুর রস মুখে মাখলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। তাই এমন উপকৃত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে থাকুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url