সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা - সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের অনেক ভুল ধারণা থেকে থাকে।আমরা অনেকে বিশ্বাস করি যে সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকায় শক্ত খাবার গ্রহণ করা ক্ষতিকারক। তাই সিজারের পর মায়ের কি ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত তার সাথে সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাই শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
সিজার বা ডেলিভারির পরের সময় গুলো একটা মায়ের জন্য ভীষণ রকমের চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকে। তাই মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ হবার জন্য মেয়েদেরকে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকায় পুষ্টিকর ও সুষম খাবার থাকা অত্যন্ত জরুরী।
সিজারের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক একটি মায়ের দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে যে সকল খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সবজি জাতীয় খাবার: সিজারিয়ান মায়েদের জন্য সবুজ শাকসবজি অনেক উপকারী।কারণ সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ভিটামিন ও আয়রন। যা সিজারিয়ান মায়েদের দ্রুত সুস্থতার জন্য অনেক প্রয়োজন। সবুজ শাক, পালং শাক, ব্রকলি, মেথে, মটরশুটে, ইত্যাদি শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা সিজারিয়ান মায়েদের ক্ষত শুকাতে অনেক সাহায্য করবে। তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকায় সবুজ শাক সবজি রাখা অত্যন্ত জরুরী।
ব্রাউন রাইস বা বাদামি ভাত: মেয়েদের সিজারের পর শরীরের ওজন অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই শরীর নিয়ন্ত্রণ রাখতে খাদ্য তালিকায় বাদামী ভাত বেছে নেন। সাদা ভাতের পরিবর্তে বাদামি ভাত খাইলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: সিজারিয়ান মায়েদের ডিহাইড্রেশনের ঝুকি থাকে অনেক বেশি। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হয়। সারাদিন অন্তত ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
মেথির বীজ খাওয়া: মেয়েদের সিজারের পর শরীরের পিঠে ও কোমরে প্রচুর পরিমাণ ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে। এ ব্যথা থেকে উপশম পাওয়ার জন্য মাকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মেথির বীজ যোগ করার জন্য ডক্টররা পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকায় মেথির বীজ রাখতে হবে।
গরুর মাংস: মেয়েদের প্রসবের পরে প্রচুর রক্তপাত হয়ে থাকে। ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি ও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। গরুর মাংসে রয়েছে লোহার উপাদান ,সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন যা শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে । সিজারের পরে শুকনো গরুর মাংস খাওয়া উচিত।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: আয়রনসমৃদ্ধ খাবার শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে অনেক সাহায্য করে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে, ডিমের কুসুম, ঝিনুক, লাল মাংস, গরুর কলিজা, ও শুকনো জাতীয় ফল মূল। একজন সিজারিয়ান মায়ের ক্ষেত্রে দিনে ৯ মিলিগ্রাম আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা অনুযায়ী আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত আয়রন জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।
সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে
সিজারের মায়ের জন্য প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আয়রন ও ক্যালসিয়াম। তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা অনুযায়ী যে সকল ফল খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আজ আপনাকে জানাবো।
তরমুজ: তরমুজ জাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামিন সি এর উৎস। এটি শরীরের টিস্যু মেরামত ও কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। এর জন্য সিজারের পরে মায়েদের অধিক পরিমাণে তরমুজ খাওয়া উচিত। তরমুজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
আঙ্গুর: আঙ্গুরে রয়েছে আয়রন ও ভিটামিন। সিজারের পর মেয়েদের শারীরিক অনেক দুর্বলতা দেখা দেয়। শরীরের এ দুর্বলতা দূর করতে নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়া দরকার। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
কমলা: কমলাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে । মেয়েদের ডেলিভারির পরে কমলা অবশ্যই খেতে হবে। কমলায় যে পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে একজন স্তনদানকারী মেয়ের জন্য অনেক উপকারী।
পেয়ারা: পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। একজন অপরেশন মেয়ের জন্য পেয়ারা খাওয়াতে অত্যন্ত জরুরি।তাই সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকায় পেয়ারার গুরুত্ব অপরিসীম।
কলা: কলাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। কলা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। দেহের ক্লান্তি দূর করতে কলার গুরুত্ব রয়েছে অনেক। তাই সিজারের পরে মায়েদের কলা খাওয়া দরকার।
এ ছাড়াও পাকা পেপে, খেজুর, ডালিম,ইত্যাদি আরও ফল সমুহতে অনেক পরিমানে প্রটিন ও ভিটামিন রয়েছে । তাই এই ফল গুলো সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা য় রাখা দরকার।
সিজারের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত না
সিজারের পর মায়েদের কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে মায়েদের ভালোভাবে সচেতন থাকা উচিত । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সিজারের পর মায়েদের কোন কোন খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
- প্রথমে বেশি মসলা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
- ভাতের সাথে ঘি খাওয়া যাবেনা।
- ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
- ভারী খাবার বা ভাজাপোড়া একেবারে খাওয়া যাবে না।
- চা - কফি এড়িয়ে চলতে হবে।
- কাঁঠাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে না।
- ডিম আর দুধ কিছু মায়েদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
- সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ,ফুলকপি, ঢেঁড়স খাবারে পেট ফাঁপার সম্ভাবনা রয়েছে।
- অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
লেখকের মন্তব্য
সিজারের পরের সময়টা মায়েদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। যদি সেজারের পর মায়ের খাবার তালিকা সঠিকভাবে নির্বাচন করা যায় তাইলে দ্রুত সুস্থতা সম্ভব। মনে রাখবেন যে কোন খাবার প্ল্যান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উপরে সিজারের পর মায়ের খাবার তালিকা। সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে। আর কি কি খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জন্য আলোচনা করেছি। এই নিয়মগুলো মেনে যদি আপনি চলতে পারেন। তাহলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যদি আমার পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url