কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা - রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার কেন করবেন।
আজকে আমি দারুন একটি টপিক নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসলাম। আজকে যে টপিক নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল কাঁচা হলুদ। আজকে আপনাদের জানাবো কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এবং রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার কিভাবে করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রিয় পার্ঠকগণ আপনারা হয়তো কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য হয়তো আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না। আজ আমি আপনাদের মাঝে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ কাঁচা হলুদের বিভিন্ন ব্যবহার আপনাদের জানাবো। তাই কাঁচা হলুদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়তে থাকুন।
আরো পড়ুন : কাচা কলার উপকারিতা সম্পর্কে
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা
সাধারণত আমরা যুগ যুগ ধরে কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে আসছি। হলুদ যে শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে তা কিন্তু নয়। কাঁচা হলুদের ওষুধি অনেক গুনাগুন রয়েছে যা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এবং রূপচর্চার ক্ষেত্রেও যে কাঁচা হলুদের কার্যকারিতা রয়েছে তা আমাদের অজানা নয়।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
- ত্বকের দাগ দূর করতে
- পোড়া দাগ দূর করতে
- লিভারের সমস্যা সমাধানে
- প্রসাবের জ্বালা দূর করতে
- শরীরের কোন অংশ মচকে গেলে
- সর্দি ও কাশি কমাতে কাঁচা হলুদ
- মাথা ব্যথা কমাতে কাঁচা হলুদের উপকারিতা
- ক্যান্সার জনিত রোগ ঠেকাতে সাহায্য করে
- গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা দূর করে
- নিয়মিত পিরিয়ড নিশ্চিত করতে
ত্বকের দাগ দূর করতে: আমাদের ত্বকের যেকোনো কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের উপকারিতা রয়েছে অনেক। কাঁচা হলুদ ভালোভাবে পিসে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে ত্বকের উজ্জ্বলতা আগের চেয়ে অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এক চিমটি কাঁচা হলুদ গুঁড়ো এক চামচ দুধ এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন ।এবং সপ্তাহে তিন চার দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
পোড়া দাগ দূর করতে: প্রথমে আপনার শরীরের যে অংশে পোড়া দাগ রয়েছে, সেখানে কাঁচা হলুদের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। এতে করে আপনার পোড়া দাগ অনেকটাই মিশে যাবে।
লিভারের সমস্যা সমাধানে: স্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা হলুদের উপকারিতা যে অনেক তা আমরা লিভারের সমস্যা সমাধানে বুঝতে পারি। লিভারের সমস্যা সমাধানে কাঁচা হলুদের রস ৬ থেকে ৭ ফোঁটা এবং বয়স অনুপাতে এক চা চামচ মধু ও চিনি মিশিয়ে নিয়মিত খাইলে লিভারের সমস্যায় অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। এবং কাঁচা হলুদের রসের সাথে একবারে সামান্য লবণ লবণ মিশিয়ে খালি পেটে খাইলে কিরমি জাতীয় রোগ সেরে যায়।
প্রসাবের জ্বালা দূর করতে: প্রসাবের জ্বালা দূর করতেও কাঁচা হলুদের উপকারিতা রয়েছে অনেক। কাঁচা হলুদের রসের সাথে এক চামচ চিনি বা মধু মিশিয়ে তিন থেকে চার সপ্তাহ পান করলে প্রসাবের জ্বালাপোড়া অনেক কমে যায়।
শরীরের কোন অংশ মচকে গেলে: শরীরের যে কোন অংশ মচকে গেলে এক চামচ লবণ সামান্য কিছু চুন এবংকাঁচা হলুদের বাটা একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটু গরম করে নিয়ে মচকে যাওয়া স্থানে তিন থেকে চার দিন লাগাতে হবে।
সর্দি ও কাশি কমাতে কাঁচা হলুদ: কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণে কারকিিউমিন ইনপফ্লয়েজা রয়েছে যা সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই সর্দি কাশি কমাতে কাঁচা হলুদের উপকারিতা রয়েছে অনেক গুণ।
মাথা ব্যথা কমাতে কাঁচা হলুদের উপকারিতা: কাঁচা হলুদ মস্তিষ্কের নিউকাস চলাচলের ব্যবস্থা অনেকগুন বাড়িয়ে তুলে। ফলে কাঁচা হলুদ মাথা ধরা ও মাথা ব্যথা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
ক্যান্সার জনিত রোগ ঠেকাতে সাহায্য করে: কাঁচা হলুদের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রক্ত কণিকা কে অনেক নিরাপদে রাখে। এর জন্য ক্লোন ক্যান্সার পাকস্থলী ক্যান্সার ও শরীরে তৈরি হতে দেয় না।
গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা দূর করে: কাঁচা হলুদ শরীরের পাকস্থলের কার্যক্রম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শরীরের অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা হলুদ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে কাঁচা হলুদের উপকারিতা রয়েছে।
নিয়মিত পিরিয়ড নিশ্চিত করতে: কাঁচা হলুদের কারকিিউমিন অনিয়মিত মাসিক রোদ এবং হরমোনের যে মাত্রা তা বৃদ্ধি বা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কাঁচা হলুদের উপকারিতা পিরিয়ড এর আগে ব্যথা কমে দিতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
আদিকাল থেকেই রূপচর্চার জন্য কাজে হলুদের ব্যবহার হয়ে এসেছে । বর্তমান যুগেও ত্বকের যত্নের জন্য কাঁচা হলুদের বিভিন্ন প্যাক তৈরি ও ব্যবহার হয়েছে আসছে। কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক দুধ ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন ।প্রথমে কাঁচা হলুদ কে ভালোভাবে পিসে এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রস, এক চা চামচ দুধ ,এক চামচ চন্দন এর গুড়া ও এক চা চামচ বেসন মিশিয়ে দুধ ও কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন।
ত্বকের উজ্জ্বলতায় এই ফেসপ্যাক প্যাকটি অনেক কার্যকর। এ ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বক উজ্জ্বল করে দিবে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ত্বকে ভালো করে শেষ ব্যক্তি ব্যবহার করতে হবে। শুধু তাই নয় ব্রণের সমস্যার সমাধানেও কাঁচা হলুদ অনেক উপকারী।
কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন। আপনি যদি সামান্য এক সপ্তাহ দুধ ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে ফেসপ্যাক তৈরি করে, আপনার মুখে লাগাতে পারেন তাইলে আপনার ত্বকে ব্রণ উঠবে না। এবং ত্বক হবে অনেক উজ্জ্বল। তাই আপনি নিয়মিত রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার করতে পারেন।
শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে অনেক। উপরে কাঁচা হলুদের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কি শুধু কাঁচা হলুদ মুখে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে অনেক। উপরে কাঁচা হলুদের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কি শুধু কাঁচা হলুদ মুখে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম।
আসলে মুখের উজ্জ্বলতার জন্য সর্বপ্রথম যে জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটি হল কাঁচা হলুদ। প্রথমে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। তারপর কাঁচা হলুদ বাটা রস ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে টক দের পরিষ্কার করে নিতে হবে ।
কারণ বেশি সময় ধরে কাঁচা হলুদ ত্বকে রাখলে ত্বকে হলদে দাগ পড়ার আশঙ্কায় থেকে যায় । কাঁচা হলুদ ত্বকের লাগানোর আগে নিশ্চিত হন সমানভাবে ত্বকে লাগানো হচ্ছে কিনা। কারণ সমান ভাবে কাঁচা হল ত্বকে না লাগালে ঠিকমত কাজ করে না।
মুখ ধুয়ে ফেলার আগে আপনাকে যে জিনিসটি লক্ষ্য রাখতে হবে তাহলে সাবান দিয়ে কখনোই ত্বক পরিষ্কার করতে যাবেন না। অন্তত দশ ঘন্টা সাবান দিয়ে মুখ ধোঁয়া থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র পরিষ্কার পানি ব্যবহার করুন।
কাঁচা হলুদের অপকারিতা
কাঁচা হলুদের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন এর অনেক অপকারিতা রয়েছে। কাঁচা হলুদের উপকারিতা জানার সাথে সাথে আমাদের কাঁচা হলুদ অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ কাঁচা হলুদের সঠিক ব্যবহার না জানলে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। আপনার যদি কাঁচা হলুদের অপকারিতা সম্পর্কে না জানা থাকে তাহলে দ্রুত জেনে নিন।
কিডনি সমস্যা ঃ যেহেতু কাঁচা হলুদ মানুষের শরীরে রস বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যদি পরিমাপের বেশি হলুদ খেয়ে নেয়া যায় তাইলে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হবে। কারণ হলো পিওরসের এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এলার্জি সমস্যাঃ পরিমাণ মতো হলুদ খেলে যেমন এলার্জির কোন সমস্যা হয় না তেমনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাওয়া হয় তাহলে এলার্জি জনিত সমস্যা বৃদ্ধি হয়ে যাবে।
আয়রনের ঘাটতিঃ বেশি পরিমাণে কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে আইরনের শোষণ রোধ বৃদ্ধি হতে পারে। যে সকল ব্যক্তির শরীরে লোহার ঘাটতি আছে তাদের কাঁচা হলুদ ব্যবহার সাবধানতার সাথে করতে হবে। কারণ হলুদ শরীরের আয়রনের ঘাটতি খুব দ্রুত বাড়ে তুলতে পারে।
অস্ত্র পাচারঃ হলুদ মানবদেহে রক্ত জমাট বাধাতে পারে। অস্ত্র পাচারের সময় মানব শরীরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই অস্ত্রো পাচারের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে খাবারের হলুদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আশা করি কাঁচা হলুদের সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত অনেক কিছু জেনেছেন। এবং কাঁচা হলুদের অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন হতে পেরেছেন। এবং এর ব্যবহার সঠিকভাবে কিভাবে করতে হয় তাও জেনেছেন। আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমার ব্লক সাইডে ভিজিট করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url